শ্রীচরণেষু মামনি ,
আজ থেকে দশ বছর আগে যেদিন তুমি বরন করে আমায় ঘরে এনেছিলে , একটি নতুন জীবন শুরু হয়েছিল আমার। কিঞ্চিৎ উৎসাহ , অজানার বিস্ময়, সবার প্রিয়জন হয়ে ওঠার প্রবল চেষ্টা ও নতুন পরিবারের প্রত্যাশার মাপকাঠি কে না ছুতে পাওয়ারভয়ে বুক ধুকপুক করতে-করতে পা রেখেছিলাম ওই দুধে-আলতার থালায়। তবে মনে হল , আমার মনের কথা বুঝে, প্রথম দিনেই আমার মন হালকা করে দিলে তুমি। এতো বছর নিজে জানলেও,সৌম্য কে বললেও, তোমাকে কোনোদিন বলতে পারিনি। তাই আজ এই চিঠি।
এই দশ বছরে তোমার থেকে অনেক কিছু শিখেছি ,আরও অনেক অনেক কিছু বাকি। তুমি নিজে জীবনে অনেক কঠিন সময় কাটিয়েও আমার জীবনটাকে সবসময় যথাসম্ভব সহজ করে তুলেছো। তুমি নিজের ইচ্ছে মনে চেপে রেখেও আমার অনেক ইচ্ছে পূরণ করেছো। তোমার জন্যই আমি কুং-ফু শেখার সুযোগ পেলাম। তোমার জন্যেই আমার গোআ, গুজরাট ও মেঘালয় দেখা হলো । আমার জন্যে তুমি ঐটুকু Zeno কে নিয়ে, এক সপ্তাহ ধরে পায়ে এতো ব্যাথা নিয়ে ,অজানা জায়গায় একটা হোটেলে সারা সারা দিন একলা থাকলে। এতো কষ্ট কত জন করে ? উদার মনে পরের মেয়েকে নিজের মতন ভালোবাসতে সবাই পারেনা , তবে তুমি সেটা সরল করে দাও । যেদিন প্রথম দক্ষিণী'র সামনের রাস্তা পার করার সময় আমার হাত ধরলে, সেদিন মনে হলো তুমি আমাকেও ভরসা করো, খুব ভালো লেগেছিলো।
তুমি আধুনিক বিচারধারাগুলোকে সত্যিই বোঝো। অনলাইন ব্যাঙ্কিং ও শপিং ইত্যাদি শিখে আত্মনির্ভর হতে আমি কাউকে দেখিনি এতো তাড়াতাড়ি। কোনোদিন জোর-জার, সীমাবদ্ধতা না করে , আমাকে সময় নিয়ে নিজে শিখে বড়ো হতে দিয়েছো , এবং ঠিক সময় উচিত পরামর্শও দিয়েছো । যতদিন তোমার কাছে থেকেছি, স্কুলের বাচ্ছাদের মতন চিন্তাহীন হয়ে কাটিয়েছি , নিজেদের বাচ্ছা হওয়ার পরেও।
Zoey'র ভাগ্য খুব ভালো যে ও এতো বছর তোমার কাছে থেকে এতো কিছু শিখেছে , পড়াশোনা,নাচ, গান, গল্প, কবিতা, কথা , খেলা আর এতো ভালোবাসা পেয়েছে ,খুব কম বাচ্চারাই এটা পায়।এতো রকমের খাবার দাবার , ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে নাচ করে, গান গেয়ে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, বছরের পর বছর এতো ছটপটে মেয়েকে সামলানো, তারপর আবার Zoey ও Zeno'র জন্য হাতে বোনা সোয়েটার। Zoey তো তোমাকেই মা বলতো :) . ওঁরা যেন সারা জীবন এইরকম সুযোগ পেতে থাকে এটাই কামনা করি।
মনে আছে , একবছর দূর্গা পুজোর দশমীর দিন আমার শরীর খারাপ হয়ে গেলো। আমি ঠাকুরবরণ করছিনা দেখে কেউ কেউ বলে উঠলো এ বাবা ওর তো সিঁদুর খেলা উচিৎ নয় । তুমি তখন সিঁদুর লাগিয়ে বললে , ও ঠাকুর তো ছুঁচ্ছেনা , সিঁদুর খেলবেনা কেন? এই বলে তুমি আমাকে সিঁদুর মাখিয়ে আশির্বাদ করলে আর আমাদের একটা খুব সুন্দর ফটো ও আছে। তুমি অনেক বার অনেক জনের কাছেই আমার পক্ষাবলম্বন করেছো , সেটা আমি কোনোদিনো ভুলবোনা।
তোমার মনের অসাধারণ জোর আমি দেখে শেখার চেষ্টা করি।তোমার প্রতিটি পছন্দ , গয়না , সারি বা পরিকল্পনা সব বাছাই করা এবং উতকৃষ্ট হয়।
কিন্তু সবচেয়ে বড উপহার যেটা তোমার থেকে পেয়েছি সেটা সৌম্য। ওকে তুমি এক বুদ্ধিমান , দয়াবান ও স্নেহশীল মানুষ করে বরো করেছো যে চারিদিক থেকে আমাদের খেয়াল রাখে ও ভালোবাসে।
এর থেকে বেশি আর কারুর কি চাহিদা থাকবে ?! তুমি সারা জীবন আমাদেরকে এই ভাবেই ভালোবাসা , শিক্ষা ও পরামর্শ দিতে থেকো ও তোমার সেবা করার সুযোগ দিও এই কামনা করি।
প্রণামান্তে ,
পিউ
——